পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহারিক: স্ক্রুগজ দিয়ে বেলনাকার বস্তুর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল নির্ণয়।

পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহারিক: স্ক্রুগজ দিয়ে বেলনাকার বস্তুর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয়।

৯ম-দশম শ্রেণি এবং এসএসসি পরিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে তোমরা ব্যবহারিক খাতায় এই পরীক্ষণটি লিখতে হবে। আশা রাখি পোস্টটি তোমাদের উপকারে আসবে এবং এবং ভাল লাগলে কমেন্ট করে আমাদের উৎসাহিত করবে।

পরীক্ষণের নাম

স্ক্রুগজ দিয়ে বেলনাকার কোন বস্তুর দৈর্ঘ্য ও ব্যাস মেপে প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয়।

তত্ত্ব ও সূত্র:

ক্ষেত্রফল হলো কোনো বস্তুর পৃষ্টতলের পরিমাণ। কোনো তারের প্রস্থ বরাবর দৈর্ঘ্যের সাথে লম্বভাবে ছেদ কাটলে যে তল পাওয়া যায় তার পরিমাণই হচ্ছে প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল। কোনো বৃত্তাকার প্রস্থচ্ছেদবিশিষ্ট তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A হলে-                   A = πr²

এখানে, r = তারের ব্যাসার্ধ এবং π = 3.14

এখন, তারের ব্যাস হলে আমরা জানি, r = d/2

সুতরাং A = π (d/2)²

∴ A = 1/4 πd²…………. (i)

আবার, তারটির দৈর্ঘ্য Ɩ এবং আয়তন V হলে-     আয়তন, V = A × Ɩ …………. (ii)

স্ক্রুগজের সাহায্যে যে কোনো দৈর্ঘ্যের পাঠ নির্ণয়ের সূত্র:

দৈর্ঘ্য = রৈখিক স্কেল পাঠ+বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা × লগিষ্ট গণন

অর্থ্যাৎ d = L + C × LC

যন্ত্রপাতি:  স্ক্রুগজ ও তার।

কাজের ধারা:

১. প্রথমে রৈখিক স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ঘরের মান ও বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা লক্ষ্য করা হয়েছে।

২. এরপর যন্ত্রের পিচ নির্ণয় করা হয়েছে। বৃত্তাকার স্কেল সম্পূর্ণ একবার ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর যে দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে তাই হলো যন্ত্রের পিচ। পিচকে বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে লঘিষ্ঠ গণন (LC) নির্ণয় করি।

৩. এখন পরীক্ষাধীন তারটিকে স্ক্রুগজের স্থায়ী দণ্ড ও স্ক্রুর প্রান্তদ্বয়ের মাঝখানে রেখে স্ক্রুটিকে একদিক বরাবর ঘুরিয়ে কী-লক ও স্কুটিকে আলতোভাবে তারের গায়ে স্পর্শ করানো হল।

৪. এই অবস্থায় রৈখিক স্কেলের যে দাগটি বৃত্তাকার স্কেলের বামদিকে দেখা যায় সেই দাগের পাঠ নেওয়া হল। এটি রৈখিক স্কেল পাঠ (L)। এবার, বৃত্তাকার স্কেলের কত নম্বর দাগ রৈখিক স্কেলের বেস-লাইনের সাথে মিলে গেছে তা লক্ষ করা হয়েছে। এটি হলো বৃত্তাকার স্কেলের পাঠ (C)।

৫. এভাবে তারের অন্ত:ত তিনটি ভিন্ন জায়গায় ব্যাসের তিনটি পাঠ নিয়ে ছকে স্থাপন করে গড় ব্যাস হিসাব করা হল।

৬. তারের ব্যাস (d) নির্ণয় করে সমীকরণ (i) এ বসিয়ে প্রয়োজনীয় হিসাবের সাহায্যে তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল (A) নির্ণয় করি।

৭. একই প্রক্রিয়ায় তারের দৈর্ঘ্যর অন্ত:ত তিনটি পাঠ নিয়ে ছকে স্থাপন করে গড় দৈর্ঘ্য (Ɩ) হিসাব করা হল।

৮. অত:পর তারের ক্ষেত্রফল (A) ও দৈর্ঘ্য (Ɩ) নির্ণয় করে সমীকরণ (ii) এ বসিয়ে প্রয়োজনীয় হিসাবের সাহায্যে তারের আয়তন (V) নির্ণয় করি।

পর্যবেক্ষণ ও সন্নিবেশন:

(ক) লগিষ্ট গণন নির্ণয়ঃ

রৈখিক স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগের মান, s = 0.5 mm

বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা, n = 50

এবং পিচ, p = 0.5 mm

∴ লগিষ্ট গণন, LC = p/n mm = 0.5/50 mm = 0.01 mm

(খ) তারের ব্যাস নির্ণয়ের ছকঃ

পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহারিক স্ক্রুগজ

হিসাব:

(ছক যে পৃষ্টায় শুরু হয়েছে তার বামের সাদা পৃষ্টায় লিখতে হবে।)

তারের ব্যাস, d₁ = 1 + 6 × 0.01 = 1 + 0.06 = 1.06 mm

তারের ব্যাস, d₂ = 1 + 14 × 0.01 = 1 + 0.14 = 1.14 mm

তারের ব্যাস, d₃ = 1 + 25 × 0.01 = 1 + 0.25 = 1.25 mm

∴ তারের গড় ব্যাস, d=(1.06+1.14+1.25)/3=3.45/3=1.15 mm

তারের দৈর্ঘ্য, Ɩ₁ = 5.5+35 × 0.01 = 5.5+0.35 = 5.85 mm

তারের দৈর্ঘ্য, Ɩ₂ = 5.5+6 × 0.01 = 5.5+0.06 = 5.56 mm

তারের দৈর্ঘ্য, Ɩ₃ = 5.5+25 × 0.01 = 5.5+0.25 = 5.75 mm

∴ তারের গড় দৈর্ঘ্য, Ɩ = (5.85+5.56+5.75)/3 = 5.72 mm

∴ তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, A = 1/4 πd²

= 1/4 × 3.14 × 1.15² mm²

=1.04 mm²

∴  তারের আয়তন, V = A × Ɩ

= 1.04 ×5.72 mm³

= 5.9488 mm³

ফলাফল/সিদ্ধান্ত:

তারটির প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল = 1.04 mm²

এবং তারটির আয়তন = 5.9488 mm³

সতর্কতা ও আলোচনা:

১। রৈখিক স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘরের মান, যন্ত্রের পিচ, লঘিষ্ট গণন সতর্কতার সাথে করেছিলাম।

২। রৈখিক স্কেল পাঠ ও বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা সতর্কতার সাথে  নির্ণয় করা হয়েছে।

৩। পাঠ নেওয়ার সময় লম্বন ত্রুটি পরিহার করেছিলাম।

৪। পিছট ত্রুটি  এড়ানোর  জন্য  স্ক্রুকে  একই  দিক  বরাবর  ঘুরিয়ে  পাঠ নেওয়া হয়েছে।

৫। অতি সতর্কতার সহিত হিসাব করেছিলাম।

আলোচনা:

ফলাফলে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। যেহেতু পরীক্ষণটি সম্পূর্ণরূপে পরিমাপ নির্ভর, তাই এক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি বা ব্যক্তিগত ত্রুটির কারণে ফলাফলে ‍উক্ত ত্রুটি আসতে পারে।

________________________________________

পরিক্ষণ-১। স্লাইড ক্যালিপার্স দিয়ে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা মেপে তার আয়তন বের করা। (কিভাবে লিখবেন?)
পরিক্ষণ-২। স্ক্রুগজ দিয়ে বেলনাকার বস্তুর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল নির্ণয়।
পরিক্ষণ-৩। ঢালু তলের উপর গড়াতে থাকা বস্তুর গড় দ্রুতি বের করা। (কিভাবে লিখবেন?)
পরিক্ষণ-৪। শিক্ষার্থীর শারীরিক ক্ষমতা বের করা। (কিভাবে লিখবেন?)
পরিক্ষণ-৫। কঠিন বস্তুর ঘনত্ব বের করা। (কিভাবে লিখবেন?)


শিক্ষা বিষয়ক সকল খবর সবার আগে পেতে চোখ রাখুন ShikkhaCare ওয়েবসাইটে।

শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই “E Shikkha” ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করে নিন।

error: Content is protected !!